বিচার হচ্ছে না শিশু নির্যাতনের

প্রকাশঃ আগস্ট ১০, ২০১৫ সময়ঃ ৭:৫১ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:২৪ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

shisu nirajatonসাম্প্রতিক সময়ে শিশুদের ওপর যেভাবে নির্মম কায়দায় নির্যাতন চলছে , অতীতের নির্যাতনের সকল চিত্রকে হার মানিয়ে দিয়েছে। তুচ্ছ কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শিশুদের ওপর ঘটছে নির্মম হত্যাকাণ্ড। শিশু হত্যার ঘটনা এমনভাবে বেড়ে গিয়েছে যে কে কীভাবে কত রকমের কায়দায় নির্যাতন চালিয়ে শিশুকে হত্যা করবে-তার যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছে সবাই। সামাজিক অবক্ষয় ও শিশু হত্যার বিচার না হওয়ায় এ ধরনের ভয়ঙ্কর হত্যা দিন দিন বেড়ে চলছে বলে মনে করছেন বিশেজ্ঞরা।

মূলত নির্মম হত্যাকাণ্ড শুরু হয় গত বছরের ২৯ নভেম্বরে। রাজধানীর ভাটারা এলাকা থেকে সোলমাইদ উচ্চ বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী ফারজানা আক্তার লিজার বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার আগের দিন দোকানে ছবি আঁকার রঙ-পেন্সিল কিনতে গিয়ে আর ফিরেনি লিজা।

তবে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে নানা রকম তথ্য, ৯ বছরের লিজাকে ধর্ষণের পর নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে । জড়িত সন্দেহে লিজাদের ভাড়া বাসার মালিক রেজাউল করিমের ছেলে সৌরভকে গ্রেফতার করে পুলিশ। একই সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী আব্দুস সালামকে।

মামলাটির তদন্ত থানা পুলিশের কাছ থেকে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে যায়। গ্রেপ্তার করা হয় সৌরভের এক বন্ধু ও এক খালাতো ভাইকে। তবে আট মাসে একে একে সব আসামিই জামিনে ছাড়া পেয়েছে।

সম্প্রতি সিলেটে নির্মম নির্যাতনে সামিউল আলম রাজন হত্যার ভিডিওচিত্র দেশবাসীর মনে গভীর দাগ কেটেছে। এর রেশ কাটতে না কাটতেই রাজধানীর খিলক্ষেতে নাজিম উদ্দিন নামে আরেক শিশুকে একই কায়দায় হত্যার খবর প্রচার পায়। খুলনায় শিশু রাকিবের পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।

গত সোমবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্যুটকেসের ভেতরে পাওয়া গেছে অজ্ঞাত পরিচয় আরেক শিশুর লাশ। পুলিশ বলছে, নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ওই শিশুকে। সর্বশেষ মঙ্গলবার বরগুনার তালতলীতে রবিউল আউয়াল নামে আরেক শিশুকে চোখ উপড়ে, কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল জানান, শিশুদের উপর নৃশংসতার কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা না। অপরাধীরা দিনের পর দিন পার পেয়ে যাচ্ছে বলে এই ঘটনাগুলো বেড়ে চলেছে। সভ্য সমাজে এমন ঘটনা ঘটতে পারে না। সংবিধানে শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা আছে। তাই রাষ্ট্রকে চুপ করে থাকলে চলবে না। রাষ্ট্রকে দোষীদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১২ সালে এ ধরনের হত্যকাণ্ড ঘটেছে ১২৬, ২০১৩ সালে ১২৮, ২০১৪ সালে ১২৭ আর এ বছরের মার্চ পর্যন্ত ৫৬ শিশু হত্যা শিকার হয়। এদের মধ্যে জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত ১৩ জনকে নৃশংস কায়দায় হত্যা করা হয়েছে। জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে ৬৯ জন শিশু হত্যার শিকার হয়েছে।

মায়ের গর্ভেও নিরাপদ নয় শিশুরা। গত ২৩ জুলাই মাগুরার দোয়ারপাড়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন নাজমা নামের এক অন্তঃস্বত্ত্বা নারী। এরপর তার গুলিবিদ্ধ শিশুটিকে জীবিত পৃথিবীর আলোতে নিয়ে আসেন চিকিৎসকরা। সে এখন ঢামেকে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে।

র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান বলেন, সামাজিক অবক্ষয় থেকে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের একটি তালিকাও করেছে। এই হত্যাকারীদের গ্রেফতারের চেষ্টা করা হচ্ছে।

এ্যামেনেস্টির বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সদস্য আব্দুল্লাহ নুহু প্রতিক্ষন ডট কমকে বলেন, একটা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ৪ টায় মৈীলিক উপাদান থাকে এবং দেশটি নির্ভর করে সে দেশের জনগনের উপর ।আর জনগন যে ট্যাক্স  দেয় সেটার মাধ্যমে সরকার চলে। আর এই জনগনের এক বিশাল অংশ হলো নারী এবং শিশু। আর সরকারের কাজ হলো শিশু এবং নারীর নিরাপওা দেওয়া ।

বর্তমান সরকার এই সব বিষয়ে নিরাপওা দিতে ব্যর্থ হয়েছে । আর দায় গুলো সরকারকে নিতে হবে। নির্যাতন বন্ধে সরকারকে আরো তৎপর হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন ।

প্রতিক্ষণ/এডি/এমএস

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G